গ্রহের অবস্থান কিভাবে ঋতু ও আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে – জ্যোতিষী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভূমিকা:
মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আবহাওয়া ও ঋতুর পরিবর্তন অনুমান করার চেষ্টা করেছে। জ্যোতিষশাস্ত্র বলে—গ্রহের অবস্থান ও গতির সঙ্গে ঋতুর সম্পর্ক আছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? চলুন দুই দৃষ্টিভঙ্গির তুলনা করি।
১) জ্যোতিষী ব্যাখ্যা:
সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহের গতি ও অবস্থান বছরের সময় ভাগ করে।
বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী যখন সূর্য মেষ, কর্কট, তুলা ও মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তখন ঋতুর পরিবর্তন ঘটে।
চন্দ্রের কলা কৃষি, বীজ বপন ও নদীর পানিস্তরের ওপর প্রভাব ফেলে—এই ধারণা হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে।
২) বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
সূর্যই প্রধান নিয়ন্ত্রক: পৃথিবীর অক্ষের ঢাল (≈২৩.৫°) এবং সূর্যের চারপাশে এর বার্ষিক আবর্তন ঋতুর মূল কারণ। সূর্যের রশ্মি যে অক্ষাংশে বেশি পড়ে সেখানে গ্রীষ্ম, আর যেটা কম পায় সেখানে শীত।
চাঁদের ভূমিকা: চাঁদ সরাসরি ঋতু তৈরি না করলেও সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণ করে। মহাসাগরের জলপ্রবাহ (Ocean Currents) আবহাওয়ার প্যাটার্নে প্রভাব ফেলে।
অন্যান্য গ্রহ: স্বল্পমেয়াদে প্রায় কোনো প্রভাব নেই। কিন্তু দীর্ঘ হাজার বছরে বৃহস্পতির মতো গ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনের (Milankovitch cycles) কারণ হতে পারে।
৩) তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
দিক জ্যোতিষ বিজ্ঞান
প্রধান গ্রহ সূর্য, চন্দ্র, শনি কেবল সূর্য (তাৎক্ষণিক)
পরিবর্তনের ধরণ বার্ষিক রাশিচক্র অক্ষীয় ঢাল + কক্ষপথ
প্রমাণ প্রাচীন অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ ও গণনা
উপসংহার:
গ্রহদের অবস্থান নিয়ে প্রাচীন জ্যোতিষ যে ধারণা দিয়েছে তাহা সম্পূর্ণ ভুল নয়—তারা সূর্য ও চাঁদের গতির মাধ্যমে ঋতুর পূর্বাভাস দিতে শিখেছিল। তবে আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে ঋতুর মূল কারণ কেবল সূর্যের অবস্থান ও পৃথিবীর কক্ষপথ, অন্য গ্রহগুলোর প্রভাব অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি এবং সরাসরি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন