লক্ষ্মী পূজা কিভাবে করবেন : ঘরে ধন-সমৃদ্ধির পূজার সঠিক নিয়ম
ভূমিকা
লক্ষ্মী দেবী হিন্দু ধর্মে সম্পদ, সৌভাগ্য ও শান্তির দেবী। বিশ্বাস করা হয়, ঘরে নিয়ম করে লক্ষ্মী পূজা করলে দারিদ্র্য দূর হয়, সংসারে আসে সমৃদ্ধি ও সুখ। বিশেষত কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা বা দীপাবলীর রাতে লক্ষ্মী পূজা করার প্রথা বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।
জ্যোতিষীয় প্রেক্ষাপট
বৈদিক জ্যোতিষ অনুসারে বৃহস্পতি (জ্যুপিটার) হচ্ছে জ্ঞান, সৌভাগ্য ও বৃদ্ধিবৃদ্ধির গ্রহ। বর্তমানে ২০২৫ এবং ২০২৬ সাল জুড়ে বৃহস্পতির অবস্থান অনেক রাশিতেই অনুকূল ও শক্তিশালী ভাবে দেখা যাচ্ছে — ফলে গ্রহের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে পজিটিভ ফলদায়ক হবে। তাই এই সময়কালে লক্ষ্মী পূজায় অংশগ্রহণ করলে বিশেষভাবে শুভতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে অনেক জ্যোতিষের মতামত।
এই উপলক্ষ্যে আপনি যদি পরিবারের সকলে মিলিত হয়ে নিয়ম করে লক্ষ্মী পূজা করেন, তাতে কেবল ধর্মীয় তৃপ্তি নয় মনস্তাত্ত্বিক শান্তিও বাড়ে এবং অনেকে মনে করেন যে গ্রহের অনুকূল সময়ে পূজা করলে ফল আরও ভালো আসে। (দ্রষ্টব্য: জ্যোতিষ একটি বিশ্বাস-ভিত্তিক প্রথা; ব্যক্তিগত ফলাফল ব্যক্তি ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।)
পূজার আগে প্রস্তুতি
- ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
- পূজার আসনে পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে সেখানে দেবীর ছবি বা প্রতিমা স্থাপন করুন।
- ধান, পানপাতা, ফুল, প্রদীপ, ধূপ, কলস, চাল, মিষ্টি বা নাড়ু ইত্যাদি সংগ্রহ করুন।
- পূজার আগে ছোট করে “বৃহস্পতি মন্ত্র” বা লক্ষ্মী স্তোত্র শুনে নেওয়া যেতে পারে।
পূজার মূল নিয়ম
- কলস স্থাপন – কলসে গঙ্গাজল, আমপাতা ও নারকেল রেখে দেবীর আহ্বান করুন।
- আসন প্রার্থনা – দেবীকে আসনে বসানোর জন্য মন্ত্রপাঠ করুন।
- পুষ্পাঞ্জলি – ফুল, চাল ও দুধ দিয়ে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দিন।
- প্রদীপ ও ধূপ জ্বালানো – ঘি বা তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করুন।
- অর্ঘ্য প্রদান – ধান, চাল, মিষ্টি, নাড়ু, ফল ইত্যাদি নিবেদন করুন।
- লক্ষ্মী স্তোত্র পাঠ – "শ্রীমৎ মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ" মন্ত্র বা লক্ষ্মী স্তোত্র পাঠ করলে পূজা সম্পূর্ণ হয়।
পূজার সময় ও রীতিনীতি (জ্যোতিষ পরামর্শ)
- যদি আপনার অঞ্চলে বৃহস্পতি অনুকূল অবস্থানে থাকে বা কোনো বিশেষ পূর্বরাশিতে শুভ প্রভাব পড়ছে বলে জ্যোতিষ পরামর্শ দেয়, তবে সেই দিনগুলোতে লক্ষ্মী পূজা করলে মানসিকভাবে অধিক আশাবাদী হওয়া যায়।
- দীপাবলি, কোজাগরী বা গ্রামের সুবিধাজনক দিনে সন্ধ্যা-বেলায় পূজা করা বেশি শুভ।
- পূজার আগে উপবাস (হালকা রোজ) এবং সৎচিন্তা বজায় রাখলে পূজার ফল বেশি মনোগ্রাহী মনে হতে পারে।
বিশেষ করণীয়
- পূজার দিনে কালো পোশাক এড়িয়ে সাদা বা হলুদ পোশাক পরা শুভ।
- পরিবারের সকল সদস্যের উপস্থিতি থাকলে দেবীর কৃপা বাড়ে।
- রাতে দেবীর আরতি শেষে প্রদীপ কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে রাখা শুভ।
- যদি আপনার বিশ্বাসে বৃহস্পতির শক্তি কাজে লাগাতে চান, পূজার শেষে শ্বেত চাল, পালক বা মিষ্টি দান করা উপকারী মনে করা হয়।
উপসংহার
লক্ষ্মী পূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি ঘরের শুদ্ধি ও মানসিক শান্তির প্রতীক। ২০২৫–২০২৬ সালের বৃহস্পতির সম্ভাব্য অনুকূল অবস্থানকে সামনে রেখে এই সময়ে নিয়ম করে লক্ষ্মী পূজা করলে অনেকেই মনে করেন যে ভাগ্য উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবুও মনে রাখবেন — এটা বিশ্বাস ভিত্তিক প্রথা; ব্যক্তিগত পরিস্থিতি ও কৃতকর্মের ওপরও ফল নির্ভর করে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন